ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের তৃতীয় দিনে কুশান পালা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০২০

জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করেছে। দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হবে। 

৫ জানুয়ারি উৎসবের 3য় দিন একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিকেল 4টা থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরপরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকার পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, কারিশমা আবৃত্তি সংগঠনের পরিবেশনায় বিশেষ চিাহিদা সম্পন্ন শিল্পী শুপ্ত, হিসাম, সাফিন, সাফান, জাবের ও লিথি পরিবেশন করে বৃন্দ আবৃত্তি, ফারহানা চৌধুরী বেবী’র পরিচালনায় বাংলাদেশ একাডেমি অফ ফাইন আর্টস পরিবেশ করে ২টি সমবেত নৃত্য, শিল্পী আশরাফুল আলম এর পরিবেশনায় একক আবৃত্তি, বহ্নিশিখা এর পরিবেশনায় ‘সোনা সোনা সোনা এবং বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ’ 2টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

মেহেরপুর জেলার পরিবেশনায় ‘মেহেরপুর আমাদের মেহেরপুর’ সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী সুলতানা টনি, রোকসানা, রাসেল, আমজাদ হোসেন, আসাদুল ইসলাম, মিনারুল ইসলাম ও জিনারুল ইসলাম, ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী অনামিকা, প্রিয়া, অনুভা, প্রজ্ঞা, আরিফা, মায়াবী, বনান্তী, হৃদিতা, ফারিয়া, যন্ত্রসঙ্গীত বাঁশিতে সুর তোলেন মো: আশিকুর রহমান লাল্টু ‘সোনা সোনা সোনা’, একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী তানিম মাহমুদ ও উপজেলা পর্যায়ের ফৌজিয়া আফরোজ তুলি। মেহেরপুর জেলার অতিথি হিসবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিজন সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম।

কুড়িগ্রাম জেলার পরিবেশনায় জেলা ব্রান্ডিং এর উপর ভিডিও পরিবেশনা, ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে এবং ও সোনাবন্ধু ধন’ গানের কথায়  ২টি সমবেত সঙ্গীত, বিজয় নিশান উড়ছে ঐ এবং তোমরা নাচো সুন্দরী কইন্যা গানের কথায় ২টি সমবেত নৃত্য, একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের তারকা শিল্পী সাজু ও উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী মুনতাহিনা মামুন মুমু। কুড়িগ্রাম জেলার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাশেদুজ্জমান বাবু। 

কুষ্টিয়া জেলার পরিবেশনায় প্রথমেই তথ্যচিত্র প্রদর্শনী জেলা ব্রান্ডিং ‘কুষ্টিয়া জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এরপরে লালনের গানে সমবেত নৃত্য, সমবেত সঙ্গীত ‘পঞ্চকবির গান’ একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী  সরকার আমিরুল ইসলাম, যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন সুজন, জাহিদ, বাসুদেব চক্রবর্তী ও আশিক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী নাট্যকার মাসুম রেজা ও অভিনেত্রী সামরোজ আজমী আলভী। কুষ্টিয়া জেলার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম,নাট্যকার মাসুম রেজা ও অভিনেত্রী সামরোজ আজমী আলভী।

ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হবে। লোকনাট্য উপভোগ করতে টিকিটি বুকিংয়ের জন্য ভিজিট করুন facebook.com/shilpakalaPage

একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত 8টায় দর্শনীর বিনিমেয়ে অনিুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথ রায়ের মূলগল্প অবলম্বনে স্মরণ রায়ের রচনা ও মদন মোহন রায়ের নির্দেশনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি কুড়িগ্রামের পরিবেশনায় ‘হামার কুড়িগ্রাম’।¬ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দোহার: লালচাঁদ চন্দ্র রায় এবং অন্যান্য শিল্পীরা হলেন দুলাল রায়, ছবিতা রায়, স্বপন চন্দ্র রায় ও স্মরণ চন্দ্র রায়। যন্ত্রে সহযোগিতা করেছেন মদন মোহন রায়, স্বপন চন্দ্র রায়, মজিবুর সরকার ও সজীব রায়।  বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় রুপকথা, উপকথা, কিংবদন্তী, লোককথা বা লোকগল্পকে আশ্রয় করে আখ্যানগীতের মাধ্যমে পালা গান পরিবেশনা করা হয়। কুশন পালা প্রাচীনকাল থেকেই দেবদেবীর উপাখ্যান বর্ণিত হতো। বর্তমানে এর বিস্তার ও প্রসারে সমাজ-জীবন ও পরিবেশের জীবনস্পন্দনকে তুলে ধরেন। পালাগানের উল্লেখযোগ্য দিক কুশান পালা। যে লৌকিক ভাষায় গ্রামীণ পালা গান রচিত হয় তা বাংলার সংস্কৃতি পূর্ব যুগের ভাষার সমগোত্রীয়।পালাগানের শুরুতে দীর্ঘ জবানীর মাধ্যমে শুরু হওয়া এর একটি বৈশিষ্ট্য। কুশান পালায় মূল ও দোহার চরিত্র 2টি মূল দায়িত্ব পালন করে। মূল পালার বিষয়কে দর্শক-শ্রোতার সামনে দোহার সহজভাবে উপস্থাপন করে। 

আগামীকাল ৬ জানুয়ারি ২০২০ বিকেল ৪টা থেকে একাডেমি প্রাঙ্গণ নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হবে জামালপুর, পঞ্চগড় ও সিরাজগঞ্জ জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত 8টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য পরিবেশনা ‘পদ্মার নাচন’।

গত ৩ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার বিকেল ৫টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমির সচিব মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া।

বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে।

২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি